V. Balsara
Quick Facts
Biography
ভি বালসারা পুরো নাম ভিয়েস্তাপ আদের্শির বালসারা (ইংরেজি: V Balsara) (২২ জুন, ১৯২২ — ২৪ মার্চ, ২০০৫) ছিলেন একজন ভারতীয় সঙ্গীত আয়োজক, পরিবেশক, আবহসঙ্গীত পরিচালক ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী। ভায়োলিন, ম্যান্ডোলিন, পিয়ানো একাধিক বাদ্যযন্ত্রের সাবলীল ব্যবহারে তাঁর সুখ্যাতি ছিল সারা বিশ্বে।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
ভি বালসারার জন্ম বৃটিশ ভারতের বোম্বাইতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে জুন গুজরাতি জানা জরাথুস্ট্রবাদ তথা পার্সি ধর্মীয় পরিবারের পরিবারে। তার আসল নাম ভিয়েস্তাপ আর্দেশির বালসারা। তার সঙ্গীত শিক্ষা মাতা নাজাময়ি'র কাছে। তার পিতার ফ্রেঞ্চ, পার্সি, জার্মান ভাষা সহ সায়েন্স ও মিউজিক শিক্ষার টিউটোরিয়াল স্কুল ছিল। পনেরো বৎসর বয়সে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। প্রথমে কিছুদিন মিলিটারি ক্যাম্পে ঘোড়াকে স্নান করানোর কাজ করতে থাকেন। কিন্তু সে কাজ পছন্দ না হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন এবং পার্সি বিয়ে বাড়িতে জ্যাজ বাজাতে শুরু করেন। মায়ের কাছ থেকেই শিক্ষা লাভেই মাত্র ছয় বৎসর বয়সে বোম্বাইয়ের এক মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তারপর যে কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। জার্মানির সঙ্গীত বিশারদ হিলদাফিল্ডের কাছে শিখেছিলেন পিয়ানো বাদন।
সঙ্গীত জীবন
বালসারা হিন্দি চলচ্চিত্রে উস্তাদ মুস্তাক হোসেনের সহকারী হিসাবে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে "বাদল" ছবি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর গুলাম হায়দার সাথে কিছুদিন। তারপর নিজে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে "সার্কাস গার্ল" ছবির অন্যতম সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে প্রায় ৩৫ টি হিন্দি ছায়াছবিতে কাজ করেছেন। ১৯৪০ হতে ১৯৫০ পর্যন্ত সময়ে প্রায় এক ডজন হিন্দি ছবির তিনি নিজে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সেগুলি হল - 'ও পঞ্ছি', 'রংমহল', 'মদ্মস্ত', 'তালাশ', 'চার দোস্ত', 'বিদ্যাপতি', 'প্যার', 'মধুশ্রাবণী', 'জয়বাবা বৈদ্যনাথ' ইত্যাদি। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এইচএমভির অর্কেস্ট্রা ডাইরেক্টর হন। আর. কে. ব্যানারে ও নৌসাদের সঙ্গে কাজ করেন। মুম্বইতে হিন্দি চলচ্চিত্রে যেসব শিল্পীর গান শুনে বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন, তারা সকলেই ছিলেন কলকাতার। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের আহ্বানে তিনি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চলে এলেন কলকাতায়। পাকাপাকিভাবে কলকাতা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলা হিন্দি সঙ্গীত জগতে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। প্রথমে স্যুইন হো স্ট্রিটে থাকতেন পরে ১৬ নম্বর অক্রুর দত্ত লেনের এক ছোট্ট ঘরে যেখানে পিয়ানো আর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে সাধনায় উদ্ভাবন করেন মেলোডিকা ও ইউনিভক্সের। তিনি পঙ্কজকুমার মল্লিক, সলিল চৌধুরী প্রমুখের অনুরক্ত ছিলেন। প্রথমদিকে রবীন্দ্র সংগীতে ভীতি ছিল তার। কিন্তু আস্তে আস্তে বাংলা ভাষা শিখে হৃদয়ঙ্গম করেন রবীন্দ্রনাথের কথা ও সঙ্গীতের সুরের বাঁধনময় চলন। নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট হলেন রবীন্দ্রসংগীতে। প্রথম রবীন্দ্র সংগীত "এই মণিহার আমার নাহি সাজে" বাজিয়েছিলেন ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের এক মঞ্চে। তার বাজানো উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্র সংগীতগুলি হল -
- এসো আমার ঘরে এসো
- সর্ব খর্ব তারে দহে
- দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়
- খর বায়ু বয় বেগে
- যদি তোর ডাক শুনে
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ৩২ টি ছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। উল্লেখযোগ্য ছবি গুলি হল- 'মা', 'চলাচল', 'পঞ্চতপা', 'পথে হলো দেখা', কাঞ্চন কন্যা', 'শুভা'ও 'দেবতার গ্রাস'। সঙ্গীত আয়োজক হিসাবে 'জয়দেব', 'চিরকুমার সভা', হাঁসুলিবাঁকের উপকথা', 'পলাতক', 'হাসপাতাল', 'ধন্যি মেয়ে', 'সন্ন্যাসী রাজা' সহ ১১২ টি ছবির কাজ করেছেন। এছাড়া যাত্রা, নাটক ইত্যাদিতেও আবহ-সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। সেগুলি হল - 'কঙ্কাল কথা কও' (যাত্রা), 'কাঁচের পুতুল' (নাটক), 'মুচিরাম গুড়' (নাটক), 'সোনালি আগুন' (নাটক) , 'মধুসূদন দত্ত' (নাটক), 'খোঁজ'( হিন্দি নাটক), 'গোদাম্বা'( হিন্দি নৃত্যনাট্য), 'সম্ভবামি যুগে যুগে'(নৃত্যনাট্য), 'চৈতন্য মহাপ্রভু' (নৃত্যনাট্য), 'সীতা' (পুতুলনাচ)। প্রত্যেকটিতে সুরের কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করেছিলেন। সঙ্গীত সম্পর্কে তার নিজের উপলব্ধি ছিল -
"জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত, কিন্তু শিল্প এবং সেই কারণে সঙ্গীত চিরস্থায়ী। প্রকৃত শিল্পের কোনও মৃত্যু নেই এবং সেটা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও সত্যি।"
বাংলা ও হিন্দির সঙ্গীত জগতে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন বালসারা। বোম্বে সিনে মিউজিসিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এবং বোম্বে সিনে মিউজিক ডাইরেক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সম্মাননা
বালসারা সঙ্গীত জীবনে বহু সম্মান ও পুরস্কার লাভ করেছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার গুলি হল ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, রাজীব গান্ধী পুরস্কার সত্যজিৎ রায় স্মৃতি স্মারক হিউম্যানিটি মিশন পুরস্কার, কমলা দেবী রাই পুরস্কার, মোহর পুরস্কার। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের আলাউদ্দিন খাঁ পুরস্কার এবং সৃষ্টিশীল সঙ্গীতের জন্য ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম উপাধি দ্বারাও সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবন
বালসারার পারিবারিক জীবন সুখের ছিল না। তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্রই আগে মারা গেছেন। নিজের সঙ্গীতময় জীবনটি তিনি নিতান্তই একাই কাটিয়েছেন।
জীবনাবসান
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বালসারা ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে মার্চ কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ভি বালসারা একজন দক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ (ইংরেজি)
- ভি বালসারা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে gaana.com