Shahjahan Siddiqui
Quick Facts
Biography
মোঃ শাহজাহান সিদ্দিকী (২৭ জুলাই ১৯৪৭ - ২৪ নভেম্বর ২০২২) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। তার খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৯।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শাহজাহান সিদ্দিকী ১৯৪৭ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া গ্রামে। ১৯৬৫ সালে তিনি মুরাদনগর থানার শ্রীকাইল কৃষ্ণকুমার বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। পরে ১৯৬৭ সালে শ্রীকাইল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৭১ সালে শাহজাহান সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে নিজ এলাকায় যান। পরে ভারতে যান। মে মাস থেকে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি পরে আরও কয়েকটি স্থানে সফলতার সঙ্গে অপারেশন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট শেষ রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত দাউদকান্দি ফেরিঘাট, মেঘনা নদীতে নির্মিত হয়েছে সেতু উড়িয়ে দেয়ার অভিযানে অংশ নেন আটজন নৌকমান্ডো। তাদের দলনেতা ছিলেন শাহজাহান সিদ্দিকী। তারা ভারত থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন দাউদকান্দির বন্ধরামপুর গ্রামে। প্রত্যেক কমান্ডোর সঙ্গে একটি করে স্টেনগান, লিমপেট মাইন, ছুরি ও জোড়া ফিনস। নির্ধারিত দিন রেডিওর গানের মাধ্যমে সিগন্যাল পেয়ে শাহজাহান সিদ্দিকী অপারেশনের প্রস্তুতি শুরু করলেন। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় নৌকমান্ডোরা খেয়েদেয়ে একটি ছইওয়ালা নৌকায় করে রওনা হলেন দাউদকান্দির ফেরিঘাটের উদ্দেশে। দূরত্ব প্রায় আট-নয় কিলোমিটার। চারদিক অন্ধকার। ধানখেতের মধ্য দিয়ে চলছে তাদের নৌকা; ধানখেতে পাতা নড়ার শব্দ, মাঝেমধ্যে ঝিঁঝি পোকার ক্ষীণ আওয়াজ; আর কোনো শব্দ নেই। ফেরিঘাট থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরত্বে এসে ছইওয়ালা নৌকা রেখে তারা উঠলেন খোলা নৌকায়। ওখান থেকে ফেরিঘাটে পৌঁছাতে তাদের সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। ফেরিঘাটে প্রহরায় পাকিস্তানি সেনা আর তাদের সহযোগীরা। পাশেই তাদের ক্যাম্প। নৌ কমান্ডো শাহজাহান সিদ্দিকী ও তার সহযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে লিমপেট মাইন লাগালেন দুটি ফেরি আর পন্টুনে। তারপর সাঁতার কেটে রওনা হলেন স্রোতের উজানে, নদীর উত্তর দিকে পূর্ব পাড়ে। নৌ কমান্ডোরা ছইওয়ালা নৌকার কাছে যখন পৌঁছালেন, তখন রাত আনুমানিক দুইটা ৪০ মিনিট। এর একটু পর শুরু হলো একের পর এক বিস্ফোরণ। শেষ রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে ফেরিঘাট ও আশপাশের তিন-চার কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত। নদীর জল ও দুই পাড় কাঁপিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো নয়টি লিমপেট মাইন। ফেরিঘাটে প্রহরারত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি আর ছোটাছুটি। এরপর একটানা গোলাগুলি।
কর্মজীবন
স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরি করেছেন শাহাজাহান সিদ্দিকী। সরকারের প্রথম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিতে যোগদান করেন, পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি নীলফামারী ও ময়মনসিংহ জেলার জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর নেন।
পরবর্তীতে ডেসকো প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, গভর্নর ইসলামী ফাউন্ডেশন ও নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বীর বিক্রম
মৃত্যু
২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকা সিএমএইচ হসপিটালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।