Muralidhar Basu
Quick Facts
Biography
মুরলীধর বসু (৫ সেপ্টেম্বর , ১৮৯৭ –২৮ ডিসেম্বর , ১৯৬০) ছিলেন কল্লোল যুগের বাংলা সাহিত্যের এক অনলস সাহিত্যব্রতী। সেকালের সচিত্র মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালিকলম-এর অন্যতম সম্পাদক ছিলেন তিনি।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
মুরলীধর বসুর জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বরব্রিটিশ ভারতের অধুনাপশ্চিমবঙ্গের কলকাতার রসা রোডে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন সাহিত্যপ্রাণ আইনজীবী এবংস্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট বন্ধু। মুরলীধরের পৈতৃকনিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার সাতক্ষীরার সন্নিহিত শ্রীপুর গ্রামে। শৈশবেই মুরলীধর পিতৃহারা হলে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্নেহসান্নিধ্যে আসেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম. এ পাশ করেন।
কর্মজীবন
এম.এ পাশের পর কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন।যৌবনে মুরলীধর দেশহিতব্রতে অনুপ্রাণিত হন আর সেই সঙ্গে চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা। ১৩০০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'শ্রমজীবিদের পত্র' সংহতিতে লেখালেখিও শুরুকরেন। একসময় সংহতি পত্রিকাটিরও সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মুরলীধর।অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বাংলা সাহিত্যের বহু লেখক ছিলেন মুরলীধরের বন্ধু। তাদের সকলের কাছে তিনি ছিলেন-মুরলীধরদা। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে সাহিত্যচর্চা করেছেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে (১৩৩৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখে) সচিত্র বাংলা মাসিক পত্রিকা কালিকলম বরদা এজেন্সির মালিক শিশিরকুমার নিয়োগীর কর্মাদক্ষতায় প্রকাশিত হয় প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দমুখোপাধ্যায় ও মুরলীধর বসুর যৌথ সম্পাদনায়। একবছর পর ১৩৪৪ বঙ্গাব্দেরবৈশাখে প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং দ্বিতীয় বর্ষের শেষ দিকে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলে ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ হতে সম্পাদনার দুরূহ দায়িত্ব নেন মুরলীধর একাই। তবে কিছুদিন সেই কাজে সঙ্গী পেয়েছিলেন সুলেখিকা স্ত্রী নীলিমা বসুকে। তার পত্রিকাতেইজীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ-ঝরা পালক-এর প্রথম কবিতা আমি সেই কবি প্রকাশিত হয়।মুরলীধর পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে থানা পুলিশ করতে বাধ্য হন।শনিবারের চিঠির খোঁচা হজম করতে হয়েছে অবিরত। 'কালিকলম'-এ প্রকাশিত গল্প উপন্যাসে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছিল।শেষ পর্যন্ত পত্নী নীলিমা বসুর অকাল প্রয়াণে, মুরলীধর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এবং অর্থ সঙ্কটে পড়েন। পত্রিকাটির চতুর্থ বর্ষে ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে চারটি সংখ্যা প্রকাশের পর তিনি পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করেন। তবে জীবনে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে তিনি সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। 'কালিকলম' বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি বন্ধুশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হনএবং একারণে একসময় স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।
মৃত্যু
মুরলীধর বসু ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রামে নিজের বাড়িতে পরলোক গমন করেন। তার পুত্র সুব্রত বসু মুরলীধর বসু জীবন ও সাহিত্য নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য 'কালিকলম' পত্রিকার কিছু নির্বাচিত রচনা নিয়ে নির্বাচিত কালি-কলম প্রকাশিত হয়েছে শিশুসাহিত্যিক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরসম্পাদনায়।