Mohammad Ibrahim
Quick Facts
Biography
মোহাম্মদ ইব্রাহিম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামে। তার বাবার নাম জমসের খান এবং মায়ের নাম আমাতুন বিবি। তার স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
মোহাম্মদ ইব্রাহিম চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুন মাসের মাঝামাঝি যুদ্ধে যোগ দেন। ২ নম্বর সেক্টরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের অধীনে যুদ্ধ করেন। তার দলনেতা ছিলেন কাজী কামাল উদ্দীন (বীর বিক্রম)। ঢাকা শহর ও আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর গভীর রাতে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সমবেত হলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বর্তমান কাঁচপুর সেতুর কাছে। তখন সেখানে সেতু ছিল না। অদূরে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মোহাম্মদ ইব্রাহিমদের লক্ষ্য ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারা সেখানে গেরিলা অপারেশন করবেন। আক্রমণ নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্রান্সফরমার ধ্বংস করে সটকে পড়া। আক্রান্ত হলে যুদ্ধের প্রস্তুতিও তাদের আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওয়াচ টাওয়ারে সার্চলাইট জ্বালানো। আলো ছড়িয়ে পড়েছে নদীসহ চারদিকে। টাওয়ারে সতর্ক পাহারায় আছে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপারেশন করতে হবে। প্রায় দুঃসাধ্য এক মিশন। পাকিস্তানি সেনারা যদি টের পায় তবে সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যাবে। সে জন্য মো. ইব্রাহিমসহ সবাই সতর্ক। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি ও তার কয়েকজন সহযোদ্ধা যেতে সক্ষম হলেন ট্রান্সফরমারের কাছে। বাকিরা থাকলেন তাদের নিরাপত্তায়। ট্রান্সফরমার ধ্বংসের জন্য বানানো হয়েছে পিকে চার্জ। ট্রান্সফরমারের গায়ে সেটা লাগিয়ে সংযোগ করা হবে কর্ডেক্স। কর্ডেক্সের মাঝ বরাবর ডেটোনেটর। সংযোগ তারে আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটবে বিস্ফোরণ। সফলতার সঙ্গেই সব কাজ শেষ হলো। এবার নিরাপদে ফিরে যাওয়ার পালা। মো. ইব্রাহিম ও তার সহযোদ্ধারা ফিরে যাচ্ছেন। তখনই ঘটল বিপত্তি। পাকিস্তানি সেনারা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল অনেক অস্ত্র। মো. ইব্রাহিমেরা পাল্টা গুলি করতে করতে দ্রুত পিছিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলির পাশাপাশি হ্যান্ডগ্রেনেডও ছুড়তে থাকল। বিস্ফোরিত একটি হ্যান্ডগ্রেনেডের স্প্লিন্টার অলক্ষে ছুটে এল মো. ইব্রাহিমের দিকে। নিমেষে আঘাত করল তার মুখে। ছিটকে পড়লেন মাটিতে। তবে দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। একজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। এ সময়ই বিদ্যুৎ চমকের মতো একঝলক আলো। তারপর পাকিস্তানিদের হতবাক করে দিয়ে একের পর এক ঘটল বিকট বিস্ফোরণ। চারদিক নিকষ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। বাতাসে ট্রান্সফরমার কয়েলের পোড়া গন্ধ। রক্তাক্ত মো. ইব্রাহিম ভুলে গেলেন সব যন্ত্রণা। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে ধ্বংস হয় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ট্রান্সফরমার। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের অনেক অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর মো. ইব্রাহিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোড়া গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। তার ডান চোখ নষ্ট ও চোয়ালের হাড় ভেঙে যায়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বীর প্রতীক