Biography
Lists
Also Viewed
Quick Facts
Places | India | ||||||
was | Writer Lyricist | ||||||
Work field | Literature Music | ||||||
Gender |
| ||||||
Birth | 18 November 1911, Serampore, Srirampore subdivision, Hooghly district, India | ||||||
Death | 26 October 1977 (aged 65 years) | ||||||
Star sign | Scorpio | ||||||
Education |
|
Biography
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র বা জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ( ১৮ নভেম্বর ১৯১১ - ২৬ অক্টোবর ১৯৭৭) ছিলেন বিশ শতকের প্রখ্যাত বামপন্থী কবি ও সঙ্গীতশিল্পী। তিনি রাজনৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েও সঙ্গীতের পারদর্শিতায় ছিলেন সমুজ্জ্বল।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্রর জন্ম ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ নভেম্বর (১৩১৮ বঙ্গাব্দের ৪ অগ্রহায়ণ) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে তার মাতুলালয়ে। আদি নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার শীতলাই গ্রামে। তার পিতা ছিলেন সেখানকার জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্র যিনি তৎকালীন জাতীয় আন্দোলনের একজন নেতা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাতা কবি ও গায়িকা সরলা দেবী ছিলেন শ্রীরামপুরের রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীর কন্যা। কংগ্রেস রাজনীতির "বিগ ফাইভ" এর অন্যতম তুলসী গোস্বামী ছিলেন তার মাতুল।
শিক্ষাজীবন
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় পাবনা জেলা স্কুলে ও পরে কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ থেকে প্রথমে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে রসায়নশাস্ত্রে বি.এসসি ও পরে সাহিত্য পাঠের আকর্ষণে বি.এ পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন।এম. এ পড়ার সময় কবি বিষ্ণু দে তার সহপাঠী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ লেখালেখি ও সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের তালিম নেন হরিচরণ চক্রবর্তী, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, কালীনাথ চট্টোপাধ্যায়, আশরাফ হোসেন প্রমুখের কাছে। রবীন্দ্র সংগীত শেখেন সরলা দেবী চৌধুরানী, ইন্দিরা দেবী ও অনাদিকুমার ঘোষদস্তিদারের কাছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সেতার, এস্রাজ, তবলা, ঢাক ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখেন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতি তার সমান আগ্রহ ছিল।
সাহিত্য ও সঙ্গীত জীবন
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ১৯২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রবস্থাতেই কবিতা লেখা শুরু করেন এবং 'পরিচয়' পত্রিকায় সেগুলি প্রকাশিত হয়। "ত্রিশঙ্কু" ছদ্মনামে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ হতে "অগ্রণী" পত্রিকায় লিখতেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "রাজধানী ও মধুবংশীর গলি" ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে প্রকাশিত হয়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তার 'মধুবংশীর গলি' কাব্যগ্রন্থ থেকে জনসভায় একক বা যুগ্মভাবে কবিতা আবৃত্তি করা হত এবং বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। শম্ভু মিত্রের কণ্ঠে 'মধুবংশীর গলি' শুনে শ্রোতারা তন্ময় হয়ে যেতেন। বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের মর্মান্তিক পরিস্থিতির অভিজ্ঞতায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচনা করেন "নবজীবনের গান"। গীত রচনায় যেমন তার রাজনৈতিক চেতনার সুস্পষ্ট ছাপ ছিল, তেমনি তাঁর সঙ্গীতের পারদর্শিতায় তিনি ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সার্থক সমন্বয় ঘটিয়েছেন। বাংলার লোকসঙ্গীতের যথাযথ প্রয়োগ করেছেন বিভিন্নভাবে। বহু চলচ্চিত্রে তিনি সুর সৃষ্টি করেছেন।প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের কোমল গান্ধার, মেঘে ঢাকা তারা ছায়াছবির সঙ্গীতপরিচালক ছিলেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রের সঙ্গীত পরিচালকের কাজও করেছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। তবে তিনি জগতে আনন্দ যজ্ঞে এই একটি গানই রেকর্ড করেছেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার সতীর্থ বিষ্ণু দে স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ গ্রন্থের কিছু কবিতার সুর রচনা করেন।
১৯৩৯-৪০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়ে আজীবন ওই পার্টির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। অবশ্য কলেজ জীবনেই তিনি মার্কসবাদী চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। তিনি বিশিষ্ট সাম্যবাদী কবি ও ঔপন্যাসিক গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস’-এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর কিছুদিন তিনি বোকারোর এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লি চলে যান। সেখানে তিনি সংগীত নাটক অকাদেমির ও ভারতীয় কলাকেন্দ্র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারই প্রযোজনা য় সেখানে রামচরিত মানস নূতনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীবেদব্যাসের সঙ্গে হিন্দিতে তার গীতিনাট্যানুষ্ঠান করিয়েছিলেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আন্তর্জাতিক সুরস্রষ্টা সম্মেলনে যোগ দিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন যান। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি থেকে ফেরার পর বাংলাদেশের শিল্পকলাকুশলীদের আহ্বানে ঢাকা যান এবং নবজীবনের গান ও অন্যান্য সঙ্গীত শেখান। ভারতের নানা প্রান্তে, মস্কোতে এবং ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব জার্মানীতে ভ্রমণকালে যে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, তারই প্রকাশ পেয়েছে কবিতায় আর প্রবন্ধে। তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ও কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'বটুকদা' ও 'ঘাসফুল'। ঘনিষ্টজনের কাছে তিনি ‘বটুকদা’নামে পরিচিত ছিলেন। শেষবয়সে গদ্যছন্দে লেখেন দুটি বই -
- বার্লিনের কবিতাগুচ্ছ
- যে পথেই যাও
পারিবারিক জীবন
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কলকাতার রিচি রোড নিবাসী বিনয়েন্দ্রপ্রসাদ বাগচীর কন্যা ঊর্মিলা বাগচীকে বিবাহ করেন। তাদের চার সন্তানের দুই পুত্রেরা হলেন শান্তনু ও সিদ্ধার্থ এবং দুই কন্যারা হলেন সুদেষ্ণা ও সুস্মিতা। ঊর্মিলা দেবী ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দেই প্রয়াত হন।
জীবনাবসান
শেষজীবনে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে জমি কিনে "কর্ষণী" নামে আদর্শ গ্রাম গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন।পুত্রের কর্মস্থল বিশাখাপত্তনম হতে কলকাতা ফেরার করমণ্ডল এক্সপ্রেসে যাত্রাকালে ট্রেনেই ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর (১১ কার্তিক ১৩৮৪ বঙ্গাব্দে) তিনি পরলোক গমন করেন।